রূপগঞ্জে রাস্তার মাঝখানে পবিসের খুঁটি ঃ দায় কার???/ পবিস এলজিইডি’র দোটানায় রূপগঞ্জের জনগনের ভোগান্তি

রূপগঞ্জে রাস্তার মাঝখানে পবিসের খুঁটি ঃ দায় কার???/ পবিস এলজিইডি’র দোটানায় রূপগঞ্জের জনগনের ভোগান্তি


নজরুল ইসলাম লিখন, রূপগঞ্জ ঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বিদ্যুতের (পবিসের) খুঁটি রাস্তার মাঝে রেখে রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। খুঁটি সরিয়ে রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে এলাকাবাসী পল্লী বিদ্যুৎ ও রাস্তাটি নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানালেও কোন লাভ হয়নি। জানা যায়, শিল্পাঞ্চলখ্যাত রূপগঞ্জ উপজেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের ভায়েলা এলাকার হুরার বাড়ি প্রায় শতাধিক পরিবারকে ৭’শ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি রাস্তার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছিল।


অবশেষে এলাকাবাসীর আবেদনের ভিত্তিতে এলজিইডির অধীনে চলতি বছর ৩৬ লাখ টাকা ব্যায়ে ১০ ফুট প্রসস্থ ও ৭’শ মিটার রাস্তাটির ড্রেন নির্মাণসহ দরপত্র সম্পন্ন হয়। পরে এ বছরের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। রাস্তাটি নির্মাণের দায়িত্ব পান প্রীতি এন্টার প্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রাস্তাটির মাঝে ৪ টি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে চারটি খুঁটি না সরিয়ে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষের দিকেও হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অথবা পল্লী বিদ্যুতের কর্তৃপক্ষ খুঁটি চারটি সরানো ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা সদর কমপ্লেক্স এলাকার আরএইচডি থেকে বিএডিসি অফিস হয়ে পাবলিক হেল্থ অফিস সড়কে ও মুড়াপাড়ায় মঠেরঘাট থেকে উপজেলা পশু হাসপাতাল সড়কের মাঝখানে পাচঁটি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ এলজিইডির এ সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খুঁটিগুলো সড়কের মাঝখানে রেখেই নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছেন। তাতে যানবাহন চলাচলে বিঘিœত হচ্ছে। যাত্রীদের দুর্ভোগ ক্রমাগত বেড়েই চলছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক দুইটিতে পাচঁটি বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। তাতে উপজেলা কমপ্লেক্সে আসা যাওয়া করতে হাজারো মানুষের চলাচলে দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। মের্সাস আসিফ এন্ড বাদার্স নামকঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই সড়ক দুইটির পুনঃনির্মাণ করছে। আর খুঁটিগুলো রাস্তার মাঝখানে রেখেই তারা নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে।

বহু আবেদন-নিবেদন করেও খুঁটিগুলো অপসারণ করাতে না পেরে তারা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। খুঁটিগুলো স্থানান্তরের জন্য বহুবার আবেদন-নিবেদন করা হলেও কোন ফল হয়নি। উপায়ান্তর না দেখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসী বারবার তাগিদ দিয়ে ব্যর্থ হয়ে জনস্বার্থেস্থানীয় সংসদ সদস্য, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের সুপারিশ সম্বলিত আবেদনপত্র দিয়েছেন। তাতেও কোন সুফল হচ্ছে না।

প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও মন্ত্রীর সুপারিশকে উপেক্ষা করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি খুঁটি গুলো স্থানান্তরের উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাতে চলাচলে বিঘœতা বেড়েই চলেছে। বিঘœতার পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনাও। বিদ্যুৎ অফিসের উদাসীনতায় দিনদিন এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছেন। যেকোন মুর্হুতে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটতে পারে।


এছাড়া রূপগঞ্জ-ইউসুফগঞ্জ সড়কের দুই/তিন স্থানে, তারাবো পৌরসভার দেবই-কাহিনা সড়কে দুইটি, শান্তিনগর-নার্সিংগল সড়কে একটিসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সড়কের মাঝখানে ঝুঁকিপুর্ণ বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কোথাও রাস্তার মাঝখানে। আবার কোথাওবা পাশে থাকা খুঁটি রাস্তার উপরে হেলে আছে। এ বিষয়গুলো নিরসন করা এখন সময়ের দাবি। ব্রাক্ষণগাঁও এলাকার বাসিন্দা শাহ্জাহান ভুঁইয়া বলেন, এ সড়ক দুইটিতে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবি, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। সড়কে খুঁটি বসানোর সময় এলাকাবাসী বাধাঁ দিলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তা অমান্য করে খুঁটিগুলো স্থাপন করে।


মঠেরঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম হারেজ বলেন, ওই সড়কের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। তাতে রিকশা, ভ্যান, সিএনজি চালিত অটোরিকশাসহ সব ধরণের যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে খুঁটিগুলো স্থানান্তর করা প্রয়োজন।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আসিফ এন্ড বাদার্সের মালিক আবুল কামাল আজাদ বলেন, জনস্বার্থে খুঁটি সরানোর জন্য গত ছয়মাস ধরে বহু আবেদন-নিবেদন, দেন-দরবার করে ব্যর্থ হয়ে সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের প্রাককলনে খুঁটি সরানোর ব্যয় ধরা হয়নি। সে কারণে পল্লী বিদ্যুতকে খুঁটি সরানোর ব্যয়ের টাকা প্রদান করা যাচ্ছে না। যা নারায়ণগঞ্জ এলজিইডি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অবহিত করেছে।আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সরানো না হলে খুঁটিগুলো সড়কের মাঝখানে রেখেই নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে।


নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের সুপারিশ সম্বলিত সড়কের মাঝখানের খুঁটি স্থানান্তর বিষয়ক একটি আবেদনপত্র পেয়েছি।এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় নেই। অনুমোদনের জন্য সেই আবেদনপত্র পল্লী বিদ্যুতের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। শিগগিরই খুঁটি গুলো সরানো হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


বিষয়টি এলাকাবাসী পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারকে জানালে তারা এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখান। এলাকাবাসীরা জানান, অনেক ভোগান্তির পর রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটি না সরিয়ে রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে। ঠিকাদারকে খুঁটি সরানো কথা বলেও কাজ হয়নি। তিনি বিদ্যুতের খুটি সরানো জন্য আলাদা কোন বাজেট দেওয়া হয়নি। এটি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাজ। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ জানায়, খুঁটি সারাতে হলে নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দিতে হবে।

টাকা জমা দিলে ঠিকাদারের মাধ্যমে খুঁটি সরানো হবে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতিতে খুঁটিসহই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এই দুই দপ্তরের গাফলতিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এক সপ্তাহের মাঝে রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ করার আগে বিদ্যুতের খুঁটি সরানো না হলে স্থানীয় এলাকাবাসী অন্দোলন করবেন বলে হুশিয়ারি দেন।

এ ব্যাপারে রাস্তাটির ঠিকাদার খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর বাবদ যে টাকা লাগবে সে টাকা আমাকে এলজিইডি টাকা দেয়নি। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ জেনারেল ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সমস্যা অনেক জায়গায় রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী জামানতের টাকা জমা দিলে আমরা খুটি সরিয়ে নিব। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত কবির বলেন, বিদ্যুতের বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দেখবেন। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ খুঁটিগুলো সরিয়ে না নিলে রাস্তার মাঝে খুটি রেখেই রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন